নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রামে জিম্মি করে বিয়ের নামে কাবিন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তাহমিনা আক্তার টুম্পা নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। আজ ২০ এপ্রিল (শনিবার) বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে উক্ত প্রতারক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী রমিজ আহমদ (৫৮)। এ সময় ভুক্তভোগির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী জান্নাতুল আরেফা চৌধুরী মিথিলা। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও লিখিত বক্তব্য জানা যায় রমিজ আহমদ (৫৮), পেশায় রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী (পৈত্রিক আবাসিক হোটেল দেখাশুনা করে)। তিনি সম্ভ্রান্ত মুসলিম ঘরের সন্তান এবং সহজ সরল জীবন যাপন করে জীবনের শেষ ধাপে এসে পড়েছেন। তিনি ছোট বেলা থেকে সহজ সরল ও চলাফেরায় হাবাগোবাদের মত এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী থাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ বিবাহ করাতে পারেননি। তিনি ও কখনো নিজের জন্য জীবন সঙ্গী খুঁজে নিতে পারেননি। তার সহজ সরল জীবনে ২০২২ সালের শেষ দিকে রেয়াজউদ্দিন বাজারে তার ব্যাক্তিগত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের পাশ্ববর্তী দোকানদার মামুন নামের এক ব্যক্তি আবছার (৪৬) নামে এক ব্যক্তির কাছে সাংসারিক ও ভালো চরিত্রের মেয়ে আছে বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচিত হওয়ার ২/১দিন পরেই আবছার হোটেল সফিনাতে তাহমিনা আক্তার টুম্পা (৩৮) কে নিজের খালাত বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রথম দেখাতেই ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান হয় টুম্পার সাথে। টুম্পা নিজেকে অবিবাহিত দরিদ্র ঘরের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় মুঠোফোনে টুম্পার সাথে তার (রমিজ আহমদ) কথা হত এবং টুম্পার কথা অনুযায়ী নানা সময় শহরের বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টে দেখা করতে যেতো। এরই মধ্যে টুম্পা রমিজ আহমদকে পছন্দ করতে শুরু করেছে বলে জানায়। ভুক্তভোগী ও কখনো কোনো নারীর প্রেমে পড়েনি বা তার জীবন সঙ্গী হিসেবে কোনো নারী নেই।
তাহমিনা আক্তার টুম্পা তাকে নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট উন্নত মানের খাওয়া দাওয়া, বিভিন্ন শপিং মলে গিয়ে দামী থ্রি-পিছ, জুতা, গহনা, শাড়ী, ঘড়ি ও দরিদ্র পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করত। এক পর্যায়ে তাহমিনা আক্তার টুম্পা তার বাবা আব্দুল কাইয়ুম সরকার (৬২), মাতা: কোহিনুর বেগম (৫৮), ভাই সাখাওয়াত হোসেন (৩২) কে একটি রেষ্টুরেন্টে এনে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর কিছুদিন পর তাহমিনা আক্তার টুম্পা তাকে (রমিজ আহমদ) বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
পরবর্তীতে তিনি টুম্পার মা-বাবার সাথে এই বিষয় কথা বলতে চাইলে টুম্পা একটি রেস্টুরেন্টে আব্দুল মালেক গাজী (৫৫) নামক ব্যক্তিকে টুম্পার অভিভাবক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। আব্দুল মালেক গাজী নামক ঐ ব্যাক্তি বিয়ের সকল দায়িত্ব গ্রহন করেন। পরবর্তীতে তাহমিনা আক্তার টুম্পা রিনা আক্তার (৪২) নামক এক নারীর সাথে পরিচয় করায় এবং সেই নারীর বাসায় কয়েকবার তাকে (রমিজ আহমদ) নিয়ে টুম্পা বেড়াতে যায়। এরই মধ্যে তাহমিনা আক্তার টুম্পা অভিযোগকারীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে দেখা করার নামে আসা যাওয়া শুরু করে এবং তার (রমিজ আহমদ) ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের আশ-পাশের লোকজন থেকে তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়। যা ভুক্তভোগী পরবর্তীতে জানতে পারে। হঠাৎ করেই তাহমিনা আক্তার টুম্পা তার বাবা-মায়ের অসুস্থতার কথা বলে এবং বিশেষ প্রয়োজন দেখিয়ে কয়েক ধাপে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা হাওলাতের নাম করে হাতিয়ে নেয়। মাঝে মধ্যে টুম্পার মাধ্যমে পরিচিত ব্যক্তিদেরকে উপহার দেয়ার জন্য টাকা পয়সা চেয়ে নিত। কিন্তু টুম্পার সাথে রেষ্টুরেন্টে দেখা করতে গেলেই সঙ্গে থাকত টুম্পার খালাত ভাই হিসেবে পরিচিত আবছার ও অভিভাবক হিসেবে আব্দুল মালেক গাজী। হঠাৎ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এসে আব্দুল মালেক গাজী তার সাথে টুম্পার বিয়ের বিষয়ে পাকাপোক্ত আলাপ করতে আসে। ভুক্তভোগী (রমিজ আহমদ) তখনি মালেক গাজীকে বলে আমার বড় ভাই, পরিবারের লোকজন এবং ভাতিজাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। উত্তরে মালেক গাজী বলেন আপনার বউ (টুম্পা) এতো সুন্দর এটা আপনার ভাই-ভাতিজারা জানলে হিংসা করবে। আপনি সুন্দরী পাত্রীকে হারাবেন। কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই- বিয়ে করে তারপর জানাবেন। সুন্দরী টুম্পা ও তার কথিত অভিভাবক মালেক গাজীর কথা অনুযায়ী সরল মনে ভুক্তভোগী নিকট আত্মীয় কাউকে কিছু জানায় নি। পরবর্তীতে সে (রমিজ আহমদ) ২ লক্ষ ১ টাকা দেন মোহর এবং ৫০ হাজার টাকা উসুল দিয়ে তাহমিনা আক্তার টুম্পাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। ১৪ জুন ২০২৩ইং বিকেল আনুমানিক ৪ টার সময় তাহমিনা আক্তার টুম্পা তাকে বিয়ের জন্য চট্টগ্রামে বিয়ের অভিনয় করে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্ট্যাম্প, চেক ও প্রায় নগদ ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাহমিনা আক্তার টুম্পা নামে এক নারী।
সংবাদ সম্মেলনে তাহমিনা আক্তার টুম্পার বিরুদ্ধে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ উল্লেখ্য করে বলা হয়- ২০০৪/৫ সালে টুম্পার প্রথম বিয়ে হয়েছিলো আলমগীর নামে এক ব্যক্তির সাথে। কিছুদিন যেতে না যেতেই কাবিনের টাকা আদায় করে আলমগীর থেকে সরে আসে টুম্পা। ২০০৮ সালে টুম্পার খালাতো ভাই আমির হোসেনকে বিয়ে করে টুম্পা- কিছুদিন পর তাকে তালাক দিয়ে কাবিনের টাকা আদায় করে সরে পড়ে। ২০১৩ সালে মেহেরাব হোসেন নামে এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা কাবিন দেখিয়ে সংসার শুরু করে টুম্পা। এরই মধ্যে মেহেরাব হোসেন থেকে ২৩ লক্ষ টাকা কাবিন আদায় করেছে টুম্পা। মেহেরাব হোসেনের ঘরে টুম্পার ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাহমিনা আক্তার টুম্পা শুধু একজন প্রতারক আর কাবিন ব্যবসায়ী নারীই নয়, সে একজন টাউটও বটে। বিগত- সালে টুম্পার কথিত সিনিয়র কোর্টের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা এডভোকেট মাসকুর রহমান মাসুকের (লাল বিল্ডিং) জুনিয়র উকিল পরিচয় দিয়ে অনেক সাধারণ লোকের কাছ থেকে মামলা করার নাম করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। ফাহিমা আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী টুম্পা ও তার কথিত সিনিয়র এডভোকেটের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করলে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আইনজীবী সমিতির শালিশে এডভোকেট মাসুক ও প্রতারক টুম্পা ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং মামলা করার নামে যে টাকা নিয়েছিলো সে টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হয়। আইনজীবী সমিতির কাছে টুম্পা আইনজীবী পরিচয় দেয়ায় তাকে “টাউট” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে তাহমিনা আক্তার টুম্পা আর কখনো আদালত প্রাঙ্গণে আসবে না বলে অঙ্গিকার করে।
প্রতারক তাহমিনা আক্তার টুম্পার বিরুদ্ধে বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতে অপর ৪৫৬/২৩ সিআর- ২৪৯৩/২৩ (ধারা- ৪০৬/৪২০/৪৯৫/৩৮৬/৫০৬/৩৪ দঃ বিঃ), সিআর- ১৬৬/২০ ধারা- ১৩৮ ঘও অঈঞ) চলমান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাহমিনা আক্তার টুম্পার বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগী মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাহমিনা আক্তার টুম্পার বর্তমান চট্টগ্রামের ১৫৮৮ হামজার বাগ, কুয়ার পাড়, হামজার বাগ কলোনীতে বসবাস করছে।
প্রতারণার স্বীকার হওয়া রমিজ আহম্মদ (৫৮) এর দাবী প্রতারক তাহমিনা আক্তার টুম্পাসহ তার সহযোগীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হোক।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এ বি এম গিয়াস উদ্দিন, মোঃ সাঈদ রেজা, মোঃ মানিক, এয়ার মোহাম্মদসহ আরো অনেকে।