নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তে মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মনি লাল দাশের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিপিসিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন মনি লাল দাশ। জালিয়াতের মাধ্যমে পরবর্তীতে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে ভারত, লন্ডনে ও কানাডাতে টাকা পাচারসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের সঙ্গে জড়িত মনি লাল দাশ। তিনি এখন টাকার কুমির হয়েও বহাল তবিয়তে বসে আছেন বিপিসির চেয়ারে। মনিলাল দাশের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবুও নিরব বিপিসির কর্মকর্তারা।
১৯৯৬ সালের ২৪ অক্টোবর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী ব্যবস্থাপকের পদের জন্য অভিজ্ঞতা সহ ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতক পাস চাওয়া হয়। কিন্তু মনি লাল দাশের স্নাতকের রেজাল্ট তৃতীয় শ্রেণি। যে কারণে বিপিসির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে তার আবেদন করার যোগ্যতা নেই। সেই মনিলাল দাশ পেয়েছেন অবৈধ নিয়োগ। আবার সময় অসময় প্রোমোশন পেয়ে মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) পদ থেকে ক্ষমতার ছড়ি ঘুরাচ্ছেন আওয়ামী আশীর্বাদ পুষ্ট এ কর্মকর্তা।
গত ১৫ বছর ধরে মনি লাল দাশের বিরুদ্ধে বিপিসি ও বিপিসির অন্তর্গত প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড হতে অবৈধ উপায়ে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে ভারতে পাঁচার করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসির অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, এলপি গ্যাস লিঃ, ইস্টার্ন রিফাইনারি সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল এমডিদেরকে বদলি করা হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসির অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিইও মনি লাল দাশ এর অঢেল দুর্নীতি থাকা সত্বেও এখনো পর্যন্ত এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও এর পদে বহাল তবিয়তে আছে। সূত্রেও জানা যায়, চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন অফিসের গত ২৪/০৪/২০২৪ ইং তারিখে চিঠিতে বলা হয়েছে মনি লাল দাশ সহ তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায় চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন বিভাগীয় কার্যালয় হতে গত ০৮/০৭/২০২৪ ইং তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ সংশোধনী ২০১৯- এর বিধি ১৮ অনুযায়ী অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অবরুদ্ধ করণের জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন দাখিল করা হয়।
বিপিসির মহাব্যবস্থাপক মনি লাল দাশ ২০২১ এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবেসিইও এর দায়িত্ব পান। এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে মিলিত হয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্বেও নেই কোন পদক্ষেপ। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিউজে আসা ৪২৭ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। উক্ত বিষয় ছাড়াও অডিট বিভাগ হতে দেওয়া আপত্তি অনুযায়ী বিধিবহির্ভুত ভাবে গাড়ির ঋণ নেওয়া ও ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। অগ্রিম হিসাবে নেওয়া ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার হিসাব দেওয়ার বিষয়ে দায়ী কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা বা টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। অনুমোদনহীন ১৪ কোটি ৮৮ লক্ষ ৩ হাজার টাকার বিলের বিষয়ে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পণ্য বিক্রয় করে ৫৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎকারী কর্মকর্তা হিসাব বিভাগে বহাল তবিয়তে আছে। সাবেক হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা মাহমুদুল্লাহ হক তুষার ৫০ কোটি টাকার এফডিআর অনিয়ম দুর্নীতির কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অডিট আপত্তি থাকা ১৪ কর্মকর্তারা এখনো পর্যন্ত এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে বহাল তবিয়তে আছেন।
২০ বছর ধরে সরকারি এলপিজি বিক্রির দায়িত্বে এসএওসিএল এর সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবদুস সালাম মীর। প্রতিষ্ঠানটি থেকে তিনি মাসে বেতন পান ৮৬ হাজার ৫২৫ টাকা। কিন্তু ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের প্রতি মাসে কিস্তি শোধ করেন ১ লক্ষ ৪৯৯ টাকা। বেতনের চেয়ে ঋণের কিস্তির পরিমাণ বেশি- তিনি পারিবারিক খরচ কীভাবে সামলান।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও মনি লাল দাশ এর অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ছত্রছায়ায় রয়েছে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে বিপিসি থেকে এসএওসিএলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ‘মনি লাল দাশকে পাঠানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য। উনি যদি তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানে উনাকে সিইওর পদ থেকে অপসারণ করা জরুরি। না হলে সামনে বিপিসি কে অনেক জবাবদিহিতা করতে হবে বলে মনে করি।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, ১৪ জন কর্মকর্তার নামের সরকারি অডিট আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ খাতে এলপিজি ও বিটুমিন এর মাধ্যমে কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
বিপিসির এলপিজির নির্দিষ্ট ডিলারদের এলপিজি না দিয়ে দুটি নির্দিষ্ট ডিলারকে এলপিজি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি অতীব ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিপিসির মত স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পরবর্তীতে পদোন্নতি ও শীর্ষ পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুর্নীতি ক্ষমতার অপ্রয়োগ করে হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মনিলাল দাশ এর নিয়োগ জালিয়াতির প্রশ্নের নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আসা প্রায় সকল চেয়ারম্যান, সচিব। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনেকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিপিসি। গত ১৬ বছর বিপিসির দায়িত্বে আসা প্রায় সকল চেয়ারম্যান এর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট কর্তব্য ব্যক্তিরা।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে বিবিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন যেহেতু বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সুতরাং সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিউজ হওয়ার পরেও জালিয়াতির তথ্য মুছে ফেলতে ফাইলগুলো সম্ভবত গায়েব করে ফেলা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানান। এরপরে বিপিসির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বন্ধে অটোমেশন উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাতে বিশেষ করে তেল বিক্রি ও মজুদ ১ ক্লিকে দেখা যেত কিন্তু সেই প্রক্রিয়া থামিয়ে রেখেছে মনি লাল দাশ ও তার কিছু সহযোগী অসাধু কর্মকর্তারা।
এছাড়াও বিপিসির কয়েক হাজার কোটি টাকা জামানত হিসেবে খাত অখ্যাত ক্রেডিট রেটিং এর নিচে থাকা ব্যাংকে রেখে মনিলাল দাশ শত কোটি টাকা কমিশন নিয়ে আসছে। গত ১৫ বছর ধরে বিপিসির ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা জামানত হিসেবে নিজেদের পছন্দের ব্যাংকে রেখে কমিশন ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কোটিতে ২৫ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর চট্টগ্রাম। আর তহবিল রাখা হয়েছে ঢাকার উত্তরায় একটি ব্যাংকে। এর শাখায় কেন? কিসের জন্য? সে কথা সবার জানা। উক্ত হিসাব অনুযায়ী ২০ হাজার কোটি টাকার কমিশন বাবদ প্রতি কোটিতে ২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে মনি লাল দাশ আয় করেন ৪০ কোটি টাকা।