চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স এসোসিয়েশন’র ১১ দফা দাবির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স এসোসিয়েশন’র ১১ দফা দাবির পক্ষে আজ ২৭ জানুয়ারী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

দেশের পণ্য পরিবহনের শতকরা প্রায় ৮৫% ভাগই সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে পরিবাহিত হয়। তার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর সহ দেশের সমগ্র বন্দরের ৯৫ ভাগ কার্যক্রম আমাদের এই প্রাইম মুভার ট্রেইলার, ফ্লাটবেড, লো-বেড ও সেমি লো-বেড গাড়ীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দেশের সরকারী, বে-সরকারী, ভারী শিল্প কারখানা ও সরকারী মেঘা প্রকল্প সমূহ দেশের এই সমস্ত সাফল্যের পিছনে নিভীরভাবে জরিয়ে আছে আমাদের এই সেক্টর তথা হেভী ইক্যুপমেন্ট ও প্রাইম মুভার ট্রেইলার। করোনা মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক গোলযোগ প্রভৃতি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে দেশের অনেক কিছু অচল ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও দিন রাত ২৪ ঘন্টা দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত সচল ও সক্রিয় রাখে কেবল সড়ক-মহাসড়কে পণ্য পরিবহন সেক্টর। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের চরম ঝুঁকি ও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা পরম দায়িত্ববোধ থেকে দেশ, জনগণ ও সরকারের পাশে দাঁড়াতে কখনো দ্বিধা ও পিছ পা হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে আরো জানান, পণ্য পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকরা দেশ ও জনগণকে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে তারা সরকারের নিকট থেকে সর্বোচ্চ বঞ্চনা, অবহেলা ও অন্যায়-অবিচারের শিকার। দেশের অর্জিত রাজস্বের কাঙ্খিত অংশ আদায় হয় আমাদের এই পণ্য পরিবহন সেক্টর থেকে আসে, এমনকি দেশের সকল সেতু, উড়াল সেতু ও টানেল সহ বৃহৎ স্থাপনার সর্বোচ্চ টোল এই প্রাইম মুভার ট্রেইলার এবং ইক্যুপমেন্ট পরিবহন গুলোই দিয়ে থাকে। আরো উল্লেখ্য দেশের প্রত্যেক ব্যবসায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের উপর আয়কর দিয়ে থাকলেও একমাত্র আমরাই ডকুমেন্ট হালনাগাদের সময় ট্যাক্স টোকেন কর দেওয়ার পর ও আবার অগ্রিম আয়কর প্রদান করে থাকি। আমাদের ব্যবসা ও জীবন জীবিকা আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। দেশের সড়ক-মহাসড়ক সেতু রক্ষার জন্য ২০১১ সালে সরকার এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রন নীতিমালা প্রনয়ন করে। ২০১৫ সালের দিকে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু অসাধু ব্যক্তি গোষ্টী জরিমানার নামে অসহনীয় চাঁদাবাজি শুরু করে দেয়। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে বিভিন্ন সমস্যার ৭ দফা দাবিতে টানা ৫ দিন প্রাইম মুভার ট্রেইলারের কর্মবিরতী পালিত হয়। ঐ সময়ে তৎকালীন সরকারের বেশ কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃ মন্ত্রনালয়ের সভায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রীবর্গ ও পদস্থ সচিবগনের উপস্থিতিতে লো-বেড, সেমি লো-বেড, প্রাইম মুভার ট্রেইলার ও ফ্লাটবেড গাড়ী সমূহের অতিরিক্ত চাকা সংযোজন করে সেতু, সড়ক-মহাসড়ক রক্ষায় পরিকল্পনা সহ প্রাইম মুভার ও ট্রেইলারকে একই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার আইন সংশোধন ও নীতিমালা প্রণয়নের প্রেক্ষিতে প্রাইম মুভার ও ট্রেইলারের একই রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম নতুন রেজিস্ট্রেশনের বেলায় কার্যকর হলে ও পূর্বের প্রায় ৫০০০ হাজারের অধিক প্রাইম মুভার আজও একই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়নি। তৎকালীন সরকারের মৌখিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত চাকা সংযোজন ও ফ্লাটবেড নামে মামলা দেওয়া বন্ধ থাকলেও সরকারের পটপরিবর্তনের পর পর সমগ্র দেশে বেপরোয়াভাবে অতিরিক্ত চাকা সংযোজন ও ফ্লাটবেড নামে পুলিশী মামলা এক পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে উঠে। এক কথায় আমরা আজ অসহায় ও দিশাহারা, বিরাজমান সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া না হলে পণ্য পরিবহন সেক্টর অচিরেই ধ্বংসের পথে যাবে। বিগত দিন গুলোতে নানা মাধ্যম বা প্ল্যাটফর্মে অসহনীয় সমস্যা বা দুঃখ যন্ত্রনা গুলো সরকারের নিকট আমরা তুলে ধরেছি, প্রতিকার চেয়েছি কিন্তু সরকার সমস্যা গুলোর দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নীরব ও নির্বিকার থাকাকে শ্রেয় মনে করেছে। কথায় বলে “অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হয়না”। তাই দীর্ঘ দিন থেকে বিরাজ মান সমস্যা গুলোর সমাধান না করে আদর যত্নে জিইয়ে রাখার কারণে পণ্য পরিবহন মালিকদের ভিতর সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ পরিশেষে বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো

আচরে পড়লে, তখন কিন্তু ভুক্ত ভোগীদের দোষ দেওয়ার কিছু থাকবে না।

তিনি আরো জানান, আমরা সংগঠনের প্রতিনিধিরা একাধিক সভায় মিলিত হয়ে বিদ্যমান সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে ১১-দফা সংবলিত একটি সমন্বিত দাবি নামা প্রণয়ন করি। পরিশেষে গত ০৮/১২/২০২৪ইং তারিখে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ১১-দফা দাবির একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয় এবং গত ২৪/১২/২০২৪ ইং তারিখে বন্দর গেইট সংলগ্ন সল্টগোলা রেলক্রসিং চত্বরে মানব বন্ধন

কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ১১ দফা দাবীর বিষয়ে জানান দেওয়ার চেষ্টা করি। এই ১১ দফা দাবি প্রকৃতপক্ষে প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিকদের জীবন- জীবিকা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবসা নিশ্চিত করে আত্মমর্যাদার সাথে বেচে থাকার দাবি।

আমাদের ন্যায় সংগত ১১ দফা দাবি সমূহ এখানে আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরা হলোঃ-

১১ দফা দাবি সমূহ :-

১। উচ্চ বিলাসী গণ বিরোধী সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাতিল করতে হবে নতুবা মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বিধান রাখায় যাহাতে দুর্নীতির সুযোগ থাকার প্রেক্ষিতে সাংঘর্ষিক ধারা ও উপধারা গুলো সংশোধন করতে হবে।

২। প্রাইম মুভার ট্রেইলার ও ফ্লাটবেড গাড়ীর ওজন ও মাইলের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করে সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

৩। পূর্বের রেজিষ্ট্রেশনকৃত প্রাইম মুভার ট্রেইলার বি.আর.টি.এ কর্তৃক একই রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে এবং কন্টেইনারবাহী ২০ ফুট গাড়ীর ফ্লাটবেড নামকরণ উল্লেখ করতে হবে।

৪। অতিরিক্ত চাকা সংযোজন, লো-বেড, সেমি লো-বেড ও কন্টেইনারবাহী ২০ ফুট গাড়ীর ধরণ পরিবর্তনের নামে মামলা ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৫। ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট সহ বিভিন্ন করের উপর আরোপিত ভ্যাট ও অন্যান্য ফি প্রত্যাহার করে একক ডকুমেন্টের আওতায় আনতে হবে।

৬। ভাড়ায় চালিত গাড়ীর অগ্রিম আয়কর সর্ব্বোচ্চ ১০,০০০/- টাকায় নামিয়ে আনতে হবে এবং ট্যাক্স টোকেন ফি অর্ধেক করতে হবে।

৭। বি.আর.টি.এ কর্তৃক চালকদের একবারেই পেশাধারী ভারী লাইসেন্স দিতে হবে।

৮। দেশের বিভিন্ন স্কেল লোড একই নীতিমালার অর্ন্তভুক্ত করা ও ব্রীজে লোড কন্ট্রোল নীতিমালার নামে চাদাঁবাজী বন্ধ করতে হবে।

৯। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় প্রাইম মুভার ট্রেইলার টার্মিনাল দিতে হবে এবং বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য বোঝাইকৃত গাড়ীর জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করে অন্যান্য সমস্যা সমূহ দ্রুত সমাধান করতে হবে।

১০। বাংলাদেশ শ্রম আইনের সাথে সড়ক পরিবহন আইনের সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা সমূহ বাতিল করে সংস্কার করতে হবে।

১১। সমগ্র বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত সকল পণ্য পরিবহন হইতে মালামাল চুরি, ডাকাতি এবং ড্রাইভার/হেলপারদের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন