নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম চেম্বারে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবী বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রামের শতবর্ষী ব্যবসায়ী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সংস্কারে সর্বোচ্চ আগ্রাধিকার দিয়ে মেম্বারশিপ সহজীকরণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের নেতারা।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের আহবায়ক ও বন্দর ইউজার এস এম সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ আনোয়ার পাশার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করার সময় তারা এ দাবী জানান।

এসময় চেম্বার প্রশাসক বলেন, আমাকে যে সময় দেয়া হয়েছে এরমধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই আমি বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি। ওই সময় পর্যন্ত আমাদের সহযোগিতা করবেন। আমরা সুন্দর একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।

বঞ্চিত ব্যবসায়ী নেতাদের পক্ষে লিখিত দাবী উপস্থাপন করেন আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম। দাবীতে উল্লেখ করা হয়, দেশের শতবর্ষী এপেক্স ট্রেডবডি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সংস্কার করা অতীব জরুরী। এর প্রধানতম উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম চেম্বারকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, অনিয়ম দুর করা, রাজস্ব সাশ্রয় করা এবং ব্যবসায়ীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী আদর্শ চেম্বার হিসেবে গড়ে তোলা। এ ছাড়া চেম্বারের নতুন সদস্য যারা নির্বাচনের ১২০ দিন পূর্বে সদস্য হবেন শুধুমাত্র তারাই চেম্বারের নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে পারবেন। অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত সার্কুলারে উল্লেখ আছে, চেম্বারের প্রশাসক নিয়োগের তারিখ হতে ১২০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। বিষয়টি সাংঘর্ষিক। এক্ষত্রে যারা ৩০ দিন পূর্বে চেম্বারের সদস্য হবেন, তাদেরকে ভোট প্রদানের সুযোগ দিতে হবে অথবা প্রশাসক নিয়োগের তারিখ হতে ১৮০ দিন পরে নির্বাচন দিতে হবে। চেম্বারে কমপক্ষে দেড় হাজার ভুয়া ভোটার রয়েছে। এদের সদস্য পদ বাতিল করে চেম্বারের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুন সদস্য নিতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রকৌশলী ফারুককে অপসারণসহ ভোট জালিয়াতির দোসর সহকারী সচিব সৈয়দ সালামত উল্লাহ, এম এ লতিফের ম্যানেজার ও সহকারী সচিব মাহবুব আলম, লতিফের পিয়ন প্রকিউরমেন্ট অফিসার রাজীব দাশ, একাউন্টস এর আনিসুর রহমান, শ্রমিকলীগের মতিন মাস্টারের ছেলে তারেকুল ইসলাম, ছাত্রলীগের ক্যাডার সোহাগ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক চেম্বারের জয়েন্ট সেক্রেটারি নুরুল আবছার চৌধুরীকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। বিতর্কিত এসব লোকদের বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ লোকবল দিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং পকেট ভোটার বাদ দিয়ে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা আবশ্যক। এতে অসৎ ব্যক্তি নির্মূল হয়ে চেম্বার কলঙ্কমুক্ত হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৪ ইং পর্যন্ত চেম্বারের সকল হিসাব দক্ষ অডিটর নিয়োগ দিয়ে অডিট করতে হবে। গত ১৭ বছরে ডাইরেক্টর হিসেবে সিলেক্টেড ব্যক্তিবর্গ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সাবেক স্বৈরাচার সরকারের দোসর বিধায় কথিত ব্যক্তিদের আসন্ন নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্পেস ভাড়ার বিষয়ে যথাযথ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া ও তথাকথিত পোর্ট গ্রান্ড ইউনিভার্সিটির নামে ভাড়া কতটুকু আদায় হয়েছে তা খতিয়ে দেখে ন্যায্য পাওনা চেম্বারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া যোগ্য ব্যক্তি দ্বারা ইলেকশন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করে একজন ট্রেডবডি এক্সপার্ট আইন উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে।

লিখিত বক্তব্য বলেন, গত ১৭ বছর যাবত চেম্বারের অবৈধ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সচিব ইঞ্জিনিয়ার ফারুক, চেম্বারের খরচে কতবার বিদেশ গিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত কাজে কত টাকা ব্যয় করেছেন তার হিসাব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ফ্যাসিষ্ট প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন এর সময় সপ্তাহব্যাপী ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে, হোটেল আগ্রাবাদে, চট্টগ্রাম পোর্ট স্টেডিয়ামে, রাঙ্গামাটিতে যে ব্যয় হয়েছে তার যথাযথ হিসাব নিরিক্ষা সম্পন্ন করা। চেম্বারের যানবাহন/ গাড়ী বিগত প্রেসিডেন্ট ও ডাইরেক্টরগণ কোন কোন কাজে কতবার ব্যবহার করেছেন এবং কত টাকা ফুয়েল খরচ হয়েছে তার লগবুক সহ পেশ করা প্রয়োজন। নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ১২০ দিনের। এরমধ্যে অবাধ, সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এটা কোনভাবে সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে পত্র দিয়েছি, যাতে ১২০ দিনের সময়টা আরও ১২০ দিন বাড়ানো হয়। এ ছাড়া এখন যারা নতুন সদস্য হতে আবেদন করছেন, তাদের তথ্য যাচাই বাচাই করে চেম্বারের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন আপডেট রাখা হচ্ছে। এখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করার জন্য সবধরনের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সাথে আলাপ করছি। যাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে, আমরা তাদের কথা বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি। কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যাবসায়ী ফোরামের নেতা ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বাবলু, ফাল্গুনী ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল খান, ব্রিকস এসোসিয়েশনের জাহাঙ্গীর আলম, বন্দর ট্রাক কাভারভ্যান মালিক ও কন্ট্রাকটার এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল, গার্মেন্টস এক্সোসরিস ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশনের পরিচালক আবদুল ওয়াজেদ সোহেল, ব্যবসায়ী নেতা ইদ্রিস আলী, ইমরুল হাসান চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাসনাত, মো. আনাছ প্রমূখ।

 

মন্তব্য করুন