ফের পদোন্নতি কেজিডিসিএল’র বিতর্কিত কর্মকর্তাদের

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: কেজিডিসিএলে ৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে নিয়োগের সুনির্দিষ্ট অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে দুদকের একজন কর্মকর্তা মামলার সুপারিশ করেছিলেন। যিনি নিয়োগের পদোন্নতির সুপারিশ করেছেন, তিনি আবার সাবেক বিতর্কিত এমডি আইয়ুব খানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত উপমহাব্যবস্থাপক আজিজুল হক।

১৪ বছর আগের এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ২০টি পদের বিপরীতে ৩৮ জনকে নিয়োগ দেয় কেজিডিসিএল। নিয়োগ পরীক্ষার পর মেধাতালিকায় মিলেছে মাত্র ছয়জনের নাম। বাকি ৩২ জনের নিয়োগের পুরোটাই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতা- কিছুই পাওয়া যায়নি। কারও কারও সনদও ছিল জাল। কেউ কেউ আগে পাস দেখিয়ে সনদ জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়। বিতর্কিত ওই নিয়োগ প্রাপ্তদের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ছাড়পত্র ছাড়াই ৯ বছর আগে প্রথম ধাপে পদোন্নতি দিয়ে আরেক বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল কেজিডিসিএল।

নিয়ম অনুযায়ী, কেজিডিসিএলের পদোন্নতি পাওয়ার জন্য দুদকের হালনাগাদ ছাড়পত্র নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি তোয়াক্কা করেনি কেজিডিসিএলের পদোন্নতি মূল্যায়ন কমিটি। কথিত ৩৭ জন বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্তদের দুদকের ছাড়পত্র ছাড়াই আবারও দ্বিতীয় ধাপে পদোন্নতি দিয়ে নতুন করে আবার বিতর্ক সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই ধাপে ২৪ জনকে ব্যবস্থাপক উপমহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পদোন্নতি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. হাবিবুল গণি স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্যবস্থাপক থেকে উপমহাব্যবস্থাপক পদে ১১ জন এবং উপব্যবস্থাপক থেকে ব্যবস্থাপক পদে ১৩ জনকে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়।

এর আগে, ২০২০ সালের ২০ আগস্ট রাত ১২টায় ৩৭ জন কর্মকর্তাকে সহকারী ব্যবস্থাপক থেকে ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এদিকে সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়ার মধ্যে ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছে মো. গোলাম শাহজাহান। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১। ওই অনুসন্ধান করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার। মোঃ তৈয়বুল ইসলাম কোড নং-১৮৮, আব্দুল মমিন কোড নং-১৮৯, মোবারক হোসেন কোড নং-১৯০, মোঃ জাকির হোসেন কোড নং-১৯১, মোঃ হাবিবুর রহমান কোড নং-১৯২, মোঃ ফুয়াদ আউয়াল কোড নং-১৯৩, আসাদ উজ জামান কোড নং-১৯৪, গোলাম শাহজাহান কোড নং-১৯৬, তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে চলছে কানাঘোসা, অভিযোগ রয়েছে এদের পদোন্নতি হয়েছে টাকার বিনিময়ে।

অন্যদিকে সম্প্রতি পদোন্নতি প্রাপ্ত প্রেষণে আসা চন্দন ময় নন্দী, মিস হালিমা উম্মে হিন্দিয়া, মো: ফারুক হোসেন, মৃদুল কান্তি ঘোষ ও মোঃ সালাহউদ্দিন মাসুদ, এই পাঁচজন কর্মকর্তা ২০১১ সালের মার্চ মাসে সহাকারী কর্মকর্তা পদে কর্ণফুলী গ্যাসে আত্তীকরণ হয়। এ ৫ জন কর্মকর্তা ০১.০১.২০১১ তারিখ থেকে কর্ণফুলী গ্যাসে আত্তীকরণের পূর্বেই অবৈধ উপায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহাকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়। অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালার তপশিলের প্রবিধান ২ (৯) ক্রমিক ৬ (ক) লঙ্ঘন করে সহকারী কর্মকর্তা হতে ৩৩% এর স্থলে সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদে ১২০% পদোন্নতি নেয়।

পদোন্নতি নেওয়ার সময় পদোন্নতিযোগ্য পদ ছিল মাত্র ২টি যেখানে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ২ জন সৈয়দ মোনাব্বর হোসেন এবং মোঃ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী অথচ যোগ্য ২ জন ছাড়া অতিরিক্ত হিসেবে বর্ণিত ৫ জনকে সহ পদোন্নতি নেয় মোট ৭ জন। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দেয়ার জন্য প্রশাসন ডিপার্টমেন্টের তৎকালীন কর্মকর্তা মো: ফারুক হোসেন ও চন্দন ময় নন্দী মৃদুল কান্তি ঘোষ নিয়োগের নথি গায়েব করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ওই ২০টি পদের বিপরীতে সহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩৮ জনকে। নিয়োগ পাওয়া ৩২ জন পরীক্ষার্থীর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতা, নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথিপত্রসহ কোনো তথ্যপ্রমাণই নেই। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকাও পাওয়া যায়নি দুদকের অনুসন্ধানে। ৩২ জন সহকারী কর্মকর্তার নিয়োগের বৈধতা বিষয়ে কাস্টডিয়ান ও পেট্রোবাংলায় চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হলেও তার কোনো জবাব দেওয়া হয়নি দুদককে। সূত্রে যায় মোঃ বেলাল উদ্দিন, মোঃ সোহেল মৃধা, মোঃ আশরাফ আলী, মোঃ মঞ্জুর রহমান, মোঃ আব্দুল আজিজ, মাহমুদা সুলতানা, এদের নিয়োগ নিয়েও আছে দুর্নীতির অভিযোগ।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম) থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের লিখিত পরীক্ষার রিপোর্ট চাওয়া হলেও এ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি কেজিডিসিএল। লিখিত পরীক্ষার কিছু নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে মেধাতালিকায় থাকা মাত্র ছয়জন পরীক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন তদন্ত কার্যক্রম শেষে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। ওই সময় এ তদন্তটি করেছিলেন তৎকালীন দুদক চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কেজিডিসিএলের কয়েকজন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, ‘বিতর্ক থাকার পরও প্রথম ধাপে পদোন্নতি দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয় প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তা। আবারও সেই বিতর্ক কাটতে না কাটতে দ্বিতীয় ধাপে পদোন্নতি দেওয়ায় চলছে সমালোচনা। এই নিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

পদোন্নতি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ডিভিশন) মো. হাবিবুল গণিকে প্রশ্ন করলে তিনি এই ব্যপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন তার সাথে কথা বলেন।

মন্তব্য করুন