
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গ্রাম আদালতের অগ্রগতি এবং দিক নির্দেশনা বিষয় দ্বিমাসিক সমন্বয় সভা আজ ১১ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) ১০টায় আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার।
অল্প সময়ে স্বল্প খরচে স্থানীয় পর্যায়ের দেওয়ানী ও ফৌজদারি বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিস্পত্তির জন্য চালু করা হয়েছে গ্রাম আদালত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় সারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত প্রকল্প চলমান আছে। গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যকক্রমের অগ্রগতি ও নথিপত্র যথাথত ভাবে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সভা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রাম আদালত প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারি মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভার সভাপতি তার বক্তব্যে গ্রাম আদালতের বিচারিক সেবার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় বিরোধ স্থানীয়ভাবে সমাধানের সুযোগ রয়েছে গ্রাম আদালতে। গ্রাম আদালত বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সদস্য সহ সবাইকে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ছোট খাটো ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা নিস্পত্তি করা হয়। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ২০ টাকা আর ফৌজদারী মামলার জন্য মাত্র ১০ টাকা ফিস দিয়েই ইউনিয়ন পরিষদে বিচারিক সেবা পাওয়ার সুযোগ আছে। ইউনিয়ন পরিষদের মামলার আবেদনকারী ও প্রতিবাদী উভয়ের পক্ষে ২ জন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ২ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি মনোনয়ন করার মধ্যদিয়ে গ্রাম আদালত গঠন করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে বিবেচিত হয়। চেয়ারম্যান এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে চেয়ারম্যান দায়িত্ব হস্তান্তর করে পছন্দ মতো বিচারক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে গ্রাম আদালত আইনে।
চেয়ারম্যান ও মনোনীত ৪ জন সদস্য মিলেই ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদারতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চত করা সম্ভব। এর ফলে বিচারপ্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে পারেন। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে প্রদেয় এসকল সেবা সম্পর্কে গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনসাধারণ এখনো জানে না । এর ফলে স্থানীয় সমস্যা সমাধানে থানায় ও জেলা কোর্টে গিয়ে অর্থ, সময় নষ্ট করার পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হন তারা। বিশেষ করে নারীরা তাদের সমস্যা সমাধানে বাড়ির কাছেই পেয়েছে গ্রাম আদালত। নারীরা এ সেবা বিষয়ে না জানার কারণে তারা ও সেবা নিতে কম আসছেন গ্রাম আদালতে। সরকারী এ সেবা বিষয়ক ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান উপজেলা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন সভা, ওয়ার্কসপ ও প্রশিক্ষণে এ বিষয়টি আলোচনা করা দরকার। গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিচারিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করছেন। তাদের মধ্যে গ্রাম আদালতের সেবা বিষয়ক তথ্য প্রচার করার প্রতি বেশি জোর দেন তিনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গ্রাম আদালতের কাজ চলমান রাখার বিষয়ে ও তিনি আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় বিচার নিস্পত্তির জন্য ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন পাশ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবেদনকারী ও প্রতিবাদীর মনোনীত ৪ জন সদস্যকে নিয়ে গ্রাম আদালত পরিচালনা করবেন। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান এ কাজটি পরিচালনা করবেন। ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল কার্যকর না থাকলে ইউনিয়ন পরিষদের যে কোন সদস্যকে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করে গ্রাম আদালতের সেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় আন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত ৩য় পর্যায় প্রকল্প ও ইপসার আনোয়ারা উপজেলার সমন্বয়কারী মাহবুবুর লহমান সহ আনোয়ারা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ।