নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রামে ‘জাতীয় গণমুক্তি ফোরামের’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা ও দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট আবদুল মোমেন চৌধুরী।
নবগঠিত দলের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট আবদুল মোমেন চৌধুরী বলেন, ‘ক্রান্তিলগ্নে দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজনীতির পরিবর্তে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শামিল হয়ে শেষ সময়টুকু উৎসর্গ করতে চাই। আমাদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের আহ্বান নিয়ে দেশের যে প্রান্তেই গিয়েছি মানুষের সমর্থন পেয়েছি। দলের আত্মপ্রকাশের এই শুভলগ্নে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব শহীদ ও সব দেশপ্রেমিক নেতাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
এ্যাডভোকেট আবদুল মোমেন চৌধুরী আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি সত্য। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। অধিকার ভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে এ রাষ্ট্র অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। ন্যায়বিচার, সুশাসন এগুলো এখনও আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।
জাতীয় গণমুক্তি ফোরামের আহবায়ক এ্যাডভোকেট আবদুল মোমেন চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে। দেশের মালিক জনগণ তারা সকল মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশের সর্বব্যাপি সংকট। চলছে দূর্ভিক্ষ, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপশাসন। মানুষ আজ সর্ব অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে প্রতিনিধি নির্বাচনের সার্বজনীন (ঁহরাবৎংধষ) পন্থাকে ক্ষমতাসীনরা নির্বাসনে পাঠিয়েছে। দেশে সর্বব্যাপি লুটতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তথাকথিত লোন/ ধার নেওয়ার নামে একশ্রেণির লোক হাজার হাজার কোটি লোপাট করেছে। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংক, এ.ডি.বি ও আইএমএফ এর ফাঁদে পড়ে জনগণের উপর পাহাড় সম করের বোঝা চেপেছে।
দেশে গণতন্ত্রের নামে দলতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সন্ত্রাস, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, হয়রানি, গায়েবি মামলা ও গণ গ্রেফতার এবং নির্বিচার জেল জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশকে এক বৃহৎ জেলখানায় পরিণত করা হয়েছে। এখানে মানুষ অধিকার হারিয়ে বন্দি পরিবেশে বসবাস করছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। দলীয় শিক্ষকদের প্ররোচনায় সরকার দলীয় ছাত্ররা সারাদেশের শিক্ষাঙ্গন দখল করে রণাঙ্গন সৃষ্টি করেছে। চট্টগ্রামের প্রবাদ পুরুষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় পন্ডিত, অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদের মতে “যত রক্ত আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য ঝরিয়েছি অত কালি আমরা জ্ঞানার্জনের জন্য ব্যবহার করিনি।
এ্যাডভোকেট আবদুল মোমেন চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, দেশে আজ চরম অরাজকতা, আইনের শাসন অনুপস্থিত, জালেমের হাতে নিষ্পেষিত জনতা, সর্বত্র মজলুমের হাহাকার, দেশ সর্বগ্রাসী নৈরাজ্যের কবলে, ইনসাফ আজ ভুলুণ্ঠিত, সর্বত্র আওয়াজ, ইনসাফ চাই। জন মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত অপশাসন, কুশাসন, রুগ্ন, ব্যাধিগ্রস্থ ও বিষময় রাজনীতির কারণে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সীমাহীন লুটপাট চলছে। দেশে আজ মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত ও পদদলিত। দেশে চলছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড। দেশে আইনের শাসন নাই, আছে ব্যক্তির দাপট ও কুশাসন। আমাদের দেশে আইন ভঙ্গকারীরাই আজ আইন প্রণয়নকারী। আমাদের দেশ পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে একটি। কয়েকবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আত্মকেন্দ্রীক রাজনীতি দেশকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে এসেছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান সবগ্রাসী পরিস্থিতি থেকে জনগণকে মুক্তির লক্ষ্যে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘জাতীয় গণমুক্তি ফোরাম’ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে যে, জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি আমাদের আঞ্চলিক রাজনীতির প্রতি আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দেশের সব মহকুমাকে জেলা ঘোষণা করা হলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামকে এখনও জেলার পর্যায়ে উন্নীত করা হয়নি। দক্ষিণ চট্টগ্রামে স্বয়ং সম্পূর্ণ এবং আধুনিক মান সম্মত কোন হাসপাতাল নেই। কোন প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় বা কৃষি মহাবিদ্যালয় নাই। জাতীয় গণমুক্তি ফোরামের পক্ষ থেকে অবিলম্বে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণা করা, স্বয়ং সম্পূর্ণ আধুনিক মান সম্মত হাসপাতালসহ একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় গণমুক্তি ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমরা দেশের সংবিধানের আলোকে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে দেশকে আধুনিক ও যুগোপযুগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব।
দেশের সর্বস্তরের জনগণকে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি আপনারা “জাতীয় গণমুক্তি ফোরামে” যোগ দিয়ে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখুন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড: শিব প্রসাদ সূর, রোটারিয়ান আসিফ আলী মৃধা, মিয়া মো: এমদাদ হোসেন চৌধুরী, মাস্টার এ কে এম মফাজ্জল হায়দার, বীরমুক্তিযোদ্ধা এস এম রফিক, শাহেদ লতিফ, এডভোকেট আবু তাহের, এডভোকেট আবু শামা, বীরমুক্তিযোদ্ধা শাখাওয়াত হোসেন শানু প্রমুখ।